চাপে পড়েছে বাংলা? উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে? কে উদ্ধার করবে? গত রঞ্জি মরশুমের পর বঙ্গ ক্রিকেটের আনাচেকানাচে কান পাতলে একটা নামই শোনা যাবে 'রুকুদা'। কে এই 'রুকু' দা?
বাংলা ক্রিকেট সম্পর্কে যারা একটু আধটু জানেন বা খোঁজ খবর রাখেন তারা সকলেই জানেন 'রুকু' হচ্ছে অনুষ্টুপ মজুমদারের ডাকনাম যা এখন সকলের পরিচিত। আর বঙ্গ ক্রিকেটের এই পোড়খাওয়া ব্যাটসম্যানটিই হয়ে উঠেছেন চাপের মুখে বাংলা ক্রিকেটের একমাত্র ভরসা। আইপিএলে কেকেআরে যেমন একটা রাসেল আছে, বাংলা ক্রিকেটভক্তরাও তেমন বলতেই পারেন আমাদের একটা 'রুকু' দা আছে, যে নিশ্চিত হারের মুখ থেকে ম্যাচ জেতাতে পারে প্রিয় বাংলা কে।
খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। প্রথমের দিকে জায়গাও পাচ্ছিলেন না টিমে। তারপর হঠাৎই যেন জ্বলে উঠলেন তিনি। ম্যাচে দিল্লির বিরুদ্ধে বাংলা চার উইকেটে ১০০, অনুষ্টুপ ৯৯ রানের ইনিংস খেলে তিনশো পার করালেন, কোয়ার্টার ফাইনালে ওড়িশার বিরুদ্ধে বাংলা ৪৬-৪, বঙ্গ ক্রিকেটকুল প্রায় ধরেই নিয়েছে এবারেও শেষ হয়ে গেল সব স্বপ্ন, অনুষ্টুপের ব্যাট থেকে এল ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়া ১৫৭। সেমিফাইনালেও ছবিটা বদলায়নি, তারকাখচিত কর্ণাটকের বিরুদ্ধে ৬২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে বাংলা। আবারও ত্রাতার ভূমিকায় সেই অনুষ্টুপ। তিনি যেন ক্রিজে নামলেন, দেখলেন এবং হাসি ফেরালেন বাংলার ক্রিকেট অনুরাগীদের মুখে। খাদের কিনারা (৬৭-৬) থেকে তাঁর ১৪৯ নট আউট বাংলাকে নিয়ে গেল জয়ের সরণীতে। ফার্স্ট ইনিংসে বাংলা ৩১২। কিন্তু এত লড়াইয়ের পরেও বহুকাঙ্খিত সেই রঞ্জি ট্রফি বাংলার অধরা থাকলেও বাংলা ক্রিকেট পেল তাঁর এক রক্ষাকর্তা, নিশ্চিত বিপর্যয় আর বাংলা ক্রিকেটের মাঝে বারবার ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন যিনি। লোয়ার অর্ডারদের সাথে নিয়ে লড়েছেন বারবার হারার আগে হারবোনা এই মানসিকতা নিয়ে।
২০০৪ সালে অভিষেকের পর কলকাতা নাইট রাইডার্স থেকে পুনে ওয়ারিয়র্স, পুর্বাঞ্চল থেকে ইন্ডিয়া এ, মোহনবাগান থেকে রেলওয়েজ তাঁর ক্যারিয়ার বারবার থমকে গেছে আবার শুরু হয়েছে। হারিয়ে গিয়েও ফিরে এসেছেন তিনি বারবার। প্রিয় বাংলার হয়ে খেলার জন্য রেলের নিশ্চিত চাকরি ছেড়ে এসেছেন অবলীলায়। ইন্ডিয়া খেলারও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল একটা সময়। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটে তো বঙ্গ ক্রিকেটাররা চিরকালই দুয়োরানির সন্তান হয়েই থেকে গেছে তা সে আপনি যত পারফরম্যান্সই করুন না কেন! কোনও এক অজ্ঞাত কারণে ঝলমলে আইপিএল দুনিয়াও বরাবর ব্রাত্য করে রেখেছে বাংলার ক্রিকেটারদের।
কিন্তু এসব নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই তাঁর। এসব ভাবায় না তাঁকে। কি অসীম ধৈর্য তাঁর! কি দারুন মনঃসংযোগ! কালারড্ হেয়ারস্টাইল আর ট্যাটুর যুগে শান্ত, ধীর-স্থির এক সাধক যেন তিনি। তারকাসুলভ কোনও হাঁকডাক নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় হাজার হাজার ফ্যান ফলোয়িং নেই। প্রচারের আলোর ঝলকানি নেই। চুপচাপ আসেন, নীরব যোদ্ধার মতো লড়াই করেন, দলকে জেতান, নিঃশব্দে ফিরে যান। বাংলা ক্রিকেটের প্রতি দায়বদ্ধতা যেন ছোটায় তাঁকে। বাংলার জার্সিটায় তাঁর একমাত্র মোটিভেশন। আড়ালে থেকেও নায়ক তিনি।
শুভ জন্মদিন 'রুকু' দা, You have miles to go...
একনজরে অনুষ্টুপের ক্যারিয়ার:
প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ - ৬৪
রান - ৩৪৭০
গড় - ৩৮.৯৮
সর্বোচ্চ - ১৫৭
সেঞ্চুরি - ৯
হাফ-সেঞ্চুরি - ১৮
~ শুভম দে
Comments
Post a Comment